সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫২ পূর্বাহ্ন
কালের খবর ডেস্ক :
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ৫০ বছরের ইতিহাসে এমন জালিয়াতির ঘটনা আর ঘটেনি। একজন সাংবাদিক আবার সাংবাদিক নেতাও বটে এমন জালিয়াতি কিভাবে করতে পারলেন তা আমার বোধগম্য নয়। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এটিই ছিল প্রধান আলোচনার বিষয়। সংগঠনের একজন কাউন্সিলর হিসেবে আমাদের মান-সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। আমরা সবাই ক্লাবের একটি টেবিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এমন সময় প্রেস ক্লাবের একজন কর্মকর্তা (সরকারি দল সমর্থক) এ প্রসঙ্গটি তুলে বলেই বসলেন আপনারা শেখ হাসিনা ভোট জালিয়াতির জন্য গালি দেন, এটা কি তার চেয়ে কম? আপনারা ক্ষমতায় গেলে কি করবেন এখানেইতো বুঝা যাচ্ছে। এসময় টেবিলে ছিলেন বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, আমার দেশের ইউনিট প্রধান বাছির জামাল, ডেইলি স্টারের সিনিয়র সাংবাদিক এমরান হোসেনসহ আরো অনেকে। মাথা নীচু করে রাখা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারি না।
এবার আসি আসল কথায়। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বি-১৯৮৭) অনুমোদিত একটি গঠনতন্ত্র আছে। যার আলোকে ফেডারেশন পরিচালিত হয়। কখনো গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রয়োজন পড়লে তা করা যায়। তবে নিয়ম মেনে করতে হবে। আগে থেকে নোটিশ দিয়ে বার্ষিক বা দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রস্তাব উত্থান করতে হয়। দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য সমর্থন করলে তবেই সেই সংশোধনী গৃহীত হয়। এরপর এটি অনুমোদনের জন্য শ্রম অধিদপ্তরে আবেদন করতে হয়। শ্রম অধিদপ্তরের অনুমোদন পেলেই এটি কার্যকর করা যায়। এর বাইরে গঠনতন্ত্রের কোনো পরিবর্তন আনা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। তবে সাজা কি তা আমার জানা নেই।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ১৯ মার্চ ২০২২ তারিখের বার্ষিক সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্রের কোনো সংশোধনী অনুমোদিত হয় নি। ওই দিন সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ। তিনিও জানান গঠনতন্ত্রের কোনো সংশোধনী সে দিন পাস হয় নি। ওই সভার পুরোভাগে আমি ও বিএফইউজের আসন্ন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান কায়কোবাদ মিলন সামনের সারিতে পাশাপাশি বসা ছিলাম। গঠনতন্ত্র সংশোধনের কোনো প্রস্তাব সে দিন অনুমোদন লাভ করে নি।
দুর্ভাগ্যজনক হলে সত্য যে, বিএফইউজের বর্তমান সভাপতি ও মহাসচিব নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে ভয়াবহ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে গঠনতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ ধারা গুলো নিজেদের মতো করে পাল্টিয়ে ফেলে।
এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:
এক.
বর্তমান গঠনতন্ত্রের ৪ এর (ঘ) ধারায় রয়েছে,” কোনো কারণ না দর্শাইয়া যে কোনো আবেদনকারি ইউনিয়নকে সদস্যপদ প্রদান বা প্রদান না করার চূড়ান্ত ক্ষমতা নির্বাহী পরিষদের থাকিবে।”
>>নতুন ছাপা গঠনতন্ত্রে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে লিখা হয়, ” কোনো কারণ না দর্শাইয়া উপরে বর্ণিত শর্ত শিথিল বা যুক্ত করিয়া যে কোনো আবেদনকারি ইউনিয়নকে সদস্যপদ প্রদান বা প্রদান না করার চূড়ান্ত ক্ষমতা নির্বাহী পরিষদের থাকিবে।”
দুই.
অনুমোদিত গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ৭ এর (গ)
ধারায় আছে:”ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি ইউনিয়ন পূর্ববর্তী বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যমান সদস্য তালিকা অনুযায়ী প্রতি দশজন সদস্যের জন্য একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল সম্মেলনে পাঠাইবে।এই নির্ধারিত এককে শেষ ভগ্নাংশ কমপক্ষে ছয় হইলে উহার জন্যও একজন প্রতিনিধি উহার জন্যও একজন প্রতিনিধি পাঠানো যাইবে। মৃত্যু ,পেশা পরিবর্তন অথবা অন্য কোনো কারণে সদস্য পদ হারাইলে তাহারা বিদ্যমান তালিকা হইতে বাদ পডিবে।”
>>নতুন ছাপা গঠনতন্ত্রে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে উপরোক্ত কথা গুলোর পেছেন সংযুক্ত করা হয়,…..” কাউন্সিলর নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হইবে। দাখিলকৃত কাউন্সিলর তালিকার বিষয়ে কোনোরুপ আপত্তি উঠিলে বিএফইউজের নির্বাহী পরিষদ তাহা অনুসন্ধান ও তদন্তপূর্বক নিষ্পত্তি করিবে।”
অনুচ্ছেদ ১০ এর (গ) ধারায় বলা আছে:…. “একাউন্টের টাকা তোলার ক্ষেত্রে চেকে কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে সভাপতি ও মহাসচিবের মধ্যে যে কোন একজন স্বাক্ষর করিবেন।তবে ১০,০০০ (দশ হাজার)টাকার বেশি ব্যাংক থেকে তুলিতে হইলে নির্বাহী পরিষদের অনুমতি লাগবে।”
>> নতুন ছাপা গঠনতন্ত্রে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে লিখা হয়:…..” তবে ১,০০০০০ (এক লক্ষ )টাকার বেশি ব্যাংক হইলে নির্বাহী পরিষদের অনুমোদন প্রয়োজন হইবে।”
এটি যে কোন সৎ উদ্দেশ্যে করা হয় নি ,তা সহজে অনুমেয়।
চার.
বিদ্যমান গঠনতন্ত্রের শেষ পৃষ্ঠায় প্রিন্টার্স লাইনে লেখা আছে” ১৫.৪.৯৫ ইং তারিখে রেজিষ্ট্রিকৃত রেজি:নং বি-১৯৮৭: ১০ জুন ১৯৯৯ তারিখে সংশোধিত। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষে মহাসচিব মঞ্জুরুল আলম কর্তৃক প্রকাশিত।
মূল্য:দশ টাকা।
>> নতুন করে ছাপা জালিয়াতির গঠনতন্ত্রের প্রিন্টার্স লাইনে লিখা হয়েছে: “১৫ জুলাই ১৯৯৫ ইং তারিখে রেজিষ্ট্রিকৃত। রেজি:নং বি-১৯৮৭। ১০ জুন ১৯৯৯ তারিখে সংশোধিত এবং ১৯ মার্চ ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্রম আইনের সাথে সঙ্গতি রেখে সংশোধিত ও পরিমার্জিত। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন- বিএফইউজের ফেডারেশনের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন কর্তৃক প্রকাশিত।”
প্রিন্টার্স লাইনে চরম মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। কারণ এখানে বলা হয়েছে,”১৯ মার্চ ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্রম আইনের সাথে সঙ্গতি রেখে সংশোধিত ও পরিমার্জিত”। বাস্তবতা হচ্ছে : ১৯ মার্চ ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভার গঠনতন্ত্র সংশোধনের কোনো সিদ্ধান্তই হয় নি। এটি ডাহা মিথ্যাচার এবং সংগঠনের সাথে ভয়াবহ প্রতারণা ছড়া আর কিছুই নয়।
এব্যাপারে ১৯ মার্চ ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত এজিএমের সভাপতি এমএ আজিজ গতকাল বিএফইউজে মহাসচিবকে ফোন করে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।